কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী জীবন?

0
2871

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, লেখাটা সবার জন্য নয়, তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছাত্রের জন্য।

কিছুদিন আগে আমরা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এ “BUP Environmental Fest 2019” নামে অনুষ্ঠানে একটি সায়েন্টিফিক প্রোজেক্ট নিয়ে যাই। সেখানে প্রথম দিকে আমাদের কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার স্বীকার হতে হয়।
কারণ র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকলেও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে।

আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সবসময়ই বেশকিছু গর্ব নিয়ে চলি যেগুলো হয়তো সঠিক কিন্তু আলটিমেটলি আমাদের ক্যারিয়ার গড়তে বিপজ্জনক।
১। আমরা বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

২। আমরা উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

৩। আমরা অনেক ছাত্রের সাথে যুদ্ধ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি।

৪। শুধু মাত্র সিজিপিএ আমাদের ভবিষ্যত গড়ে দিবে।

৫। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের খাওয়াচ্ছে, পড়াচ্ছে, থাকতে দিচ্ছে নাম মাত্র টাকায়। তাহলে হয়তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার ভবিষ্যত গড়ে দিবে। আরো অনেক, বলে শেষ করা যাবে না।

আমি বলছি না এগুলোর একটিরও ভিত্তি নেই। প্রতিটিই সঠিক। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, এর একটি আপনার ভবিষ্যত গড়তে ন্যূনতম কোন সাহায্য করছে কিনা? হয়তো খুজে পাবেন না।
কিন্তু, আপনার জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে বিপরীত ভূমিকা পালন করবে।

যখন আপনি মনে প্রাণে ধরে নিবেন যে আপনার জীবনে আপনি কি করবেন সেটা ঠিক করে দিবে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়, তখনই আপনার এই ভাবনাটা আপনাকে স্কিল অর্জন করতে বাধা দিবে। আপনি তখন শারীরিক ভাবে তো আছেনই, মানসিক ভাবেও নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। আপনার চিন্তা ভাবনা একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে বাধা পড়ে যায়। এটি কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে খুবই বিপজ্জনক।

ফলশ্রুতিতে আমাদের ব্রেইন হয়ে পড়ে আনপ্রোডাকটিভ। আমাদের কোন ইনোভেটিভ আইভিয়া বের করতে পারি না। ফলে ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঝুকতে থাকে।

আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষ অনেকটা গা-ছাড়া ভাবেই কাটাই। কোন কাজ নেই, শুধু ক্লাস, ফ্রেন্ড আর ফেসবুক – এই আমাদের জীবন হয়ে পড়ে। কয়েকজনের হাই সিজি থাকে কিন্তু অনলি সিজি ইজ নট এনাফ। আমাদের টনক নড়ে ৪র্থ বর্ষে। কারণ তখন অনেকেরই জিএফ-বিএফ রা বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে। কিন্তু আমরা কি জানি এই ৩টা বছর আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টুকুকে বলা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। জীবনকে গড়ে নেওয়ার সুযোগ্য সময় এটি। আর আমরা আমাদের এই সময় টুকু পুরো অনপ্রোডাকটিভ কাজে ব্যয় করি।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন বিভাগ নেই যে বিভাগ থেকে পাস করে কেউ কোন চাকরি পাবে না। কিন্তু তারপরও আমাদের চাকরির হার এত কম কেন? কারণ আমরা জানিই না যে আমি যে সেকটরে আছি সেই সেকটরে কি কি সুযোগ আছে। BDJOBS এ বিভাগের নাম দিয়ে সার্চ করলেই চাকরি চলে আসে। কিন্তু সেই সার্চ করার সময়টা কার আছে? চাকরির সার্কুলারে Requirements নামে একটি অংশ থাকে। সেই Requirements দেখে যদি আপনি নিজেকে ১ম বর্ষ থেকে দক্ষ করে তোলেন, তাহলে আপনি চাকরি না পেয়ে কই যাবেন। চাকরিই আপনাকে খুজে নেবে।

আমরা আমাদের Opportunities গুলো সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল নই। এক বন্ধু আমাকে কিছুদিন আগে বলছিল, সে প্রজেক্ট করবে কিন্তু কোথায় Project showcasing competition গুলোর খোজ পাবে জানে না। আমি শুনে অবাক হইনি যে সে YOUTH OPPORTUNITIES এই অ্যাপটার নাম শোনেনি। রাজশাহী ইউনিভার্সিটির বেশিরভাগ ছাত্রই জানে না।

আমরা কতজন আমাদের এলামনাইদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে পারি? একটা বিভাগে অনেক সেকটর থাকে। অনেক দিকে মুভ করা যায়। কিন্তু আপনি যে সেক্টরে যেতে চান অন্তত সেই সেক্টরে যেসব এলামনাই আছেন, তাদের সাথে আপনার ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে। বলবেন, কোন সাড়া পাইনি? ভুলে যাবেন না সে আপনার বিভাগের সিনিয়র হলেও বর্তমানে সে একজন প্রফেশনাল। তাই তাকে প্রফেশনালি নক করতে হবে। হাই, হ্যালো বলে নক করলে কেন সাড়া পাবেন?

সর্বোপরি মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয় আপনার ভবিষ্যত গড়ে দিবে না। আপনার ভবিষ্যত আপনার নিজেকে গড়তে হবে।
It is extremely high time to select your aim. পাস করে আপনি কি করবেন সেটা এখনই ঠিক করুন। স্বপ্ন দেখতে শিখুন, ঘুমিয়ে নয় জেগে। চিন্তা করুন যে আর মাত্র ৪ বছর পর এই জায়গাটা আমার হবে।
বেশি না, দিনের মাত্র ২০ মিনিট আপনার স্বপ্নকে সময় দিন। ফেসবুক তো অনেক হল।

কখনোই ভাববেন না যে কোন নির্দিষ্ট সিট, আপনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। আপনার বিকল্প হিসেবে হাজার জন রয়েছে। আপনার একটি মাত্র ভুল পদক্ষেপ আপনার স্বপ্ন থেকে আপনাকে বঞ্চিত করতে পারে।

বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ছাত্ররা নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলছে। তারা আর এখন চাকরির জন্য সার্কুলারের আশা করে না। তারা তাদের স্কিল ও নেটওয়ার্কিং অ্যাবিলিটি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে তাদের চাকরির জন্য সার্কুলার দরকার হয় না।

তাই আপনাকে যেকোনো Opportunities এর জন্য তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে মনে রাখবেন। ভাববেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় টিকে গেছেন বলে এখানেও টিকে যাবেন। কারণ ভর্তি পরীক্ষা মুখস্থ নির্ভর আর Opportunities স্কিল নির্ভর। আর Hard reality হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই ভাল করছে। কারণ তারা আমাদের চেয়ে অনেক স্কিল্ড ও প্রফেশনাল।

আর তাই আমাদের প্রজেক্ট শোতে অংশগ্রহণ দেখে তাচ্ছিল্য করাটা অস্বাভাবিক না।

তবে সুখের খবর হল – প্রথম দিকে যারা আমাদের তাচ্ছিল্য করছিল, তারাই আমাদের প্রজেক্ট দেখে অনেক প্রশংসা করে। কয়েকজনের তো প্রজেক্টটা এতটাই ভাল লাগে যে ১৫ জন আমাদের মোবাইল নম্বর নিয়ে যায় আমাদের সাথে পরবর্তীতে এই প্রজেক্টে কাজ করার জন্য।
সর্বশেষে, আমাদের প্রজেক্ট “BUP Environmental Fest 2019” এ ৩য় স্থান অধিকার করে।

Muhammad Asaduzzaman
Executive of Branding and Outreach,
Rajshahi University Higher Study Club.
Facebook Comments